
মহিলাদের মানসিক
স্বাস্থ্যের সমস্যার পিছনে থাকে নানাবিধ কারণ। এই সাক্ষাৎকারে মহিলা, তাদের মানসিক অবসাদ এবং সামাজিক উপাদান, যা মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য-সমস্যার প্রবণতা বাড়ায়, নিয়ে হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সংস্থার
চেয়ারম্যান সুব্রত বাগচিকথা বলেছিলেন ডঃ প্রভা এস চন্দ্রা-র সঙ্গে। সেই কথপোকথন
সংক্রান্ত ভিডিওটির সম্পাদিত অংশের লিখিত রূপ তুলে ধরা হল-
সুব্রত বাগচি: আ নিউ
ডাইমেনশনে আপনাদের স্বাগত জানাই। আমি সুব্রত বাগচি এবং আমার সঙ্গে আজ এই স্টুডিওয়
উপস্থিত রয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ্ অ্যান্ড নিউরোসাইন্সেস-এর
সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর উইমেন্স মেন্টাল
হেলথ্-এর সেক্রেটারি ডঃ প্রভা চন্দ্রা।
ডঃ চন্দ্রা আপনাকে এই
অনুষ্ঠানে স্বাগত। আ নিউ ডাইমেনশন-এ আমার অতিথি হয়ে আসার জন্য আপনাকে জানাই
আন্তরিক ধন্যবাদ।
ডঃ প্রভা চন্দ্রা: এই
অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমিও খুব আনন্দিত।
সুব্রত বাগচি: এটা
আমাদের কাছে খুবই সৌভাগ্যের বিষয় যে আপনি আজ আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়ে মহিলা ও
তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। কিন্তু তার আগে আমরা আপনার
কাছে জানতে চাইব যে আপনার আজকের দিনটা কেমন ছিল?
প্রভা চন্দ্রা: আজকের
দিনটা খুবই ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে আমার। আজকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আমার রুগি
দেখার দিন ছিল আর আজ আমি এমন চারজন মহিলাকে দেখলাম যাঁদের সমস্যার মধ্যে কোনও মিল
নেই। এদের মধ্যে একজন অল্পবয়সি মেয়ে ছিল যে বৌদ্ধিক অক্ষমতায় ভুগছে। ওদিকে তার
পরিবার তার বিয়ে দেওয়ার জন্য চিন্তাভাবনা করছে; আরেকজন মহিলা ছিলেন যিনি সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি যৌন
সমস্যা ও নানারকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন এবং যার মূলে রয়েছে সম্ভবত তাঁর মানসিক
অবস্থান;
অন্যদিকে, আরেকজন মহিলা যিনি মা হতে চাইছেন কিন্তু অতীতের মানসিক
অবসাদ তাঁর পিছু ছাড়ছে না। তাই তিনি তাঁর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন
এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। ব্যস, এভাবেই ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে আজ আমার দিন কেটেছে।
সুব্রত বাগচি: চার নম্বর
মহিলার কী সমস্যা হয়েছে?
প্রভা চন্দ্রা: উনি আসলে
খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যায় ভুগছেন।
সুব্রত বাগচি: বুঝেছি, আচ্ছা এই মহিলাদের বয়স কত ছিল?
প্রভা চন্দ্রা:
প্রত্যেকেরই বয়স ৩৫-এর নীচে। সেদিক থেকে দেখলে সবাই অল্পবয়সি।
সুব্রত বাগচি: এই
সমস্যাগুলো কি শহরেই বেশি দেখা যায় নাকি গ্রামেও এই ঘটনা ঘটে, কী মনে হয় আপনার?
প্রভা চন্দ্রা: না না
একেবারেই নয়। যেমন- বৌদ্ধিক অক্ষমতায় যে মহিলা ভুগছেন তিনি দাভাঙ্গেরের গ্রামীণ
অঞ্চল থেকে এসেছিলেন। আরেকজন এসেছিলেন নেল্লোর থেকে। তাই এই সমস্যা শুধু শহরেই হয়
তেমন কথা কখনোই নিশ্চিত করে বলা যায় না। এসব সমস্যা ভারতের প্রতিটি কোণে দেখা দিতে
পারে।
সুব্রত বাগচি: তাহলে এই
সমস্যার সঙ্গে শহর-গ্রামের কোনও সম্পর্ক নেই। বা এই সমস্যার সঙ্গে গরিব বা
বড়লোকেরও কোনও যোগ নেই। (প্রভা চন্দ্রা: না, কোনওভাবেই যোগ নেই।) এই বিষয়ে আমি আপনার মতামত জানতে চাই।
আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১.২ কোটি এবং আমরা প্রায়শই বলি যে আমাদের দেশে মনোরোগ
বিশেষজ্ঞের সংখ্যা চার হাজারেরও কম ও সম্ভবত দশ হাজারের মতো প্রশিক্ষিত চিকিৎসক
রয়েছে।
এটা সত্যি বিশাল সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার মতো একটা বিষয়। আবার ১.২ কোটি
জনসংখ্যার মধ্যে ৫০ শতাংশ মহিলা। কিন্তু তার মানে আমি এটা বলছি না যে ৫০শতাংশ
মহিলার মধ্যেই ৫০ শতাংশ সমস্যা রয়েছে। কিছু মানুষ মনে করে যে মহিলাদের মানসিক
স্বাস্থ্যের বিষয়টা সম্ভবত একটা বিরাট সমস্যা।
শুধু যে এর ফলে একজন মানুষই
ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়। অনেকসময়ে নীরবে সেই মানুষের পরিচর্যাকারীরাও দুর্দশার মধ্যে
পড়ে। এবং একটা পরিবারের কাছে এই পরিস্থিতি মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এমনকী এর
শাখা-প্রশাখা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তাই আপনি আমাদের বলুন যে মহিলাদের
মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন- এই বিষয়টার প্রতি কি সত্যিই
আমাদের বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত?
Post a comment